মৃত্যু অনিবার্য। প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবে কার মৃত্যু কোন অবস্থায় হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.)বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি জান্নাতিদের আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে শুধু এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার তাকদির অগ্রগামী হয় এবং সে জাহান্নামিদের আমলে লিপ্ত হয়ে যায়। অবশেষে তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৪৩)
তাই শুধু আমলের ওপর ভিত্তি করে শুভ মৃত্যুর আশায় থাকা যাবে না; বরং এর পাশাপাশি ভালো অবস্থায় মৃত্যুর জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। আজকের লেখায় হাদিসের আলোকে শুভ মৃত্যুর কয়েকটি নিদর্শন তুলে ধরা হলো।
মৃত্যুকালে কালিমা পাঠের সৌভাগ্য : মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের বলেন, যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১৬)
শেষ কাজ ভালো হওয়া : হুজাইফা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় একদিন রোজা রাখবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সদকা করবে এবং এটাই হবে তার শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমদ : ৫/৩৯১)
আত্মরক্ষায় মৃত্যু : সাহাবি সায়িদ ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ, যে তার পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ, যে দ্বিন রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ এবং যে তার জীবন রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২)
শুক্রবার দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলিম শুক্রবার দিনের বেলা কিংবা রাতে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে মুক্তি দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮০)
জিহাদের মাঠে মৃত্যু : পৃথিবীতে যারা আল্লাহর দ্বিনকে সমুন্নত রাখতে জিহাদের ময়দানে শাহাদত বরণ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে সে শহীদ, যে আল্লাহর পথে মৃতুবরণ করেছে সে শহীদ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২০৬)
ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মৃত্যু : নবীজির যুগে এক ব্যক্তি ইহরাম বাঁধা অবস্থায় উটের পিঠ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। তা দেখে আল্লাহর রাসুল (সা.) তার সম্পর্কে বলেন, তাকে বরইপাতার পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার (পরিহিত) দুটি কাপড়েই তাকে কাফন দাও। তবে তার মাথা আবৃত কোরো না। কেননা কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১২০৬)
মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু : মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের আশা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সেও শুভ মৃত্যুর অধিকারী হবে। রাশেদ ইবনে হুবাইশ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুসলিমকে হত্যা করা হলে তা শাহাদাত, তাউন বা মহামারিতে মৃত্যুবরণ শাহাদাত, সন্তান প্রসবের সময় নারীর মৃত্যুবরণ শাহাদাত এবং যক্ষ্মা হয়ে মৃত্যুবরণ শাহাদাত। (মুসনাদে আহমদ : ৩/২৮৯)
সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যু : উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, সন্তান প্রসব করতে গিয়ে নারীর মৃত্যু হলে তা শাহাদাত। আর তার সন্তান তাকে জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ : ৪/২০১)
পানিতে ডুবে বা আগুনে পুড়ে মৃত্যু : বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শহীদ পাঁচ শ্রেণির : প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারী, পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ভূমিধসে মৃত্যুবরণকারী এবং আল্লাহর পথের শহীদ। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৩)
মহান আল্লাহ আমাদের মৃত্যু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালো অবস্থায় দান করুন।